হাওর বার্তা ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরে দেশান্তরী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। চেয়ারপারসনের মাথায় ঝুলছে দুটি দুর্নীতির মামলা। এসব মামলায় রায় কী হবে, তা নিয়েও রয়েছে উত্কণ্ঠা। অন্যদিকে পর পর দুবার নির্বাচনে অংশ না নিলে বাতিল হতে পারে দলের নিবন্ধন। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দোলাচলে রয়েছে বিএনপি।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে উত্সাহ-উদ্দীপনা দেখা গেলেও হাইকমান্ডের দ্বিধাগ্রস্ততায় নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের একেক ধরনের বক্তব্যে অনেকটা অস্পষ্টতার মধ্যে রয়েছে বিএনপির তৃণমূল।
দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূলে উদ্দীপনার কমতি নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে নিয়ে তাদের এ উদ্দীপনা আরো বাড়ছে। তাদের ধারণা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে।
এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে তারা শঙ্কিত। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতির মামলা চলমান রয়েছে। এ মামলাগুলোয় খালেদা জিয়ার সাজা হলে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ আইনি বাধার মুখে পড়বে। এছাড়া যদি খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়ে যান এবং নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, তখন দলের নীতিনির্ধারণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া নিয়ে কী পরিস্থিতি হবে, তাও ভাবাচ্ছে নেতাদের। এসব ভাবনায় নেতাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। যে যার মতো করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে দূরত্ব।
সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তার যদি সাজাও হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আপিল হচ্ছে চলমান মামলা। যতক্ষণ নিষ্পত্তি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সাজা ভোগ করবেন না। অবশ্য মওদুদের এ বক্তব্য নিয়ে দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল তাকে ফোন করা হলে তিনি নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি দলীয় সরকার বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ সময় গয়েশ্বর নির্দলীয় সরকার বা সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ মুহূর্তে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কিছু বলা যাবে না।
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো ঘোষণা না এলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবেই। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, নিবন্ধন বাঁচানোর জন্য বিএনপি অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিএনপি থাকবে কিনা, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগে দেখতে হবে বিষয়টি সংবিধানে আছে কিনা। সংবিধানে না থাকলে কীভাবে থাকবে তারা?’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এর আগেও বিভিন্ন সময় জোর দিয়ে বলেছেন, এ সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। আর যদি দলটি এবারো গতবারের মতো ভুল করে, সেক্ষেত্রে তাদের চূড়ান্ত মাশুল দিতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে দলের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। বিএনপি অবশ্যই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে, তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সংবিধান সংশোধনীর দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, সংবিধান জনগণের জন্য। কাজেই জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান পুনরায় সংশোধন করা যেতে পারে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। কিন্তু এতে কোনো ফল না পেয়ে পরবর্তীতে ধারাবাহিক আন্দোলন থেকে সরে আসে দলটি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রায় ১০ বছর হতে চলল ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে দলটির নেতারা ধারাবাহিকভাবেই অভিযোগ করে আসছেন যে, দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই। দেশে ক্রমাগত গুম, খুন ও হত্যাকাণ্ড চলতে থাকায় রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার ব্যর্থ বলেও দাবি তাদের। তাই আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিসহ নানা বিষয় সামনে তুলে এনে আবারো সক্রিয় রাজনীতিতে অবস্থান জোরালো করতে চাইছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ রাজনৈতিক দল।